রামায়ণ গান

ত্রেতা যুগের আদি পৌরাণিক মহাকাব্যের স্বাক্ষর বহন করছে রামায়ণ। মহাভারতের মতো রামায়ণ ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গনে বিরাট সম্মান দখল করে আছে। আর এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মহাকবি বাল্মীকি রচিত রামায়ণ। রামায়ণ এমনই এক নিদর্শন যা থেকে এর রসপিপাসু ভক্তরা ধর্মীয় রস আস্বাদনের মাধ্যমে নিজেদের দৈহিক এবং আত্মিক আনন্দ লাভ করেন।


অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রাম তার বিমাতা। কৈকেয়ীর কাছে দেওয়া তার পিতার প্রতিশ্রুতি পালনের নিমিত্তে ১৪ বছরের জন্য বনবাসে যান। সেখানে সর্বস্থানকালে লংকার রাজা রাবণ মায়াবলে রামের প্রাণাধিক প্রিয় পত্মী সীতাকে হরণ করে। স্ত্রীশোকে পাগলপ্রায় রাম সুগ্রীব ও হনুমানের সহায়তায় সীতাকে উদ্ধার করতে সমর্থ হলেও সীতার সতিত্বের ওপর সন্দেহ পোষণ করা হলে সীতা অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে তার যথার্থ প্রমাণ দেন। অযোদ্ধায় ফিরে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকাকালীন সময়ে প্রজাদের মনে সীতার সতীত্ব নিয়ে পুনরায় সন্দেহ হলে রাম তাকে বনবাসে পাঠান। বাল্মীকি মুনির আশ্রমে সীতা লব ও কুশ নামে যমজ সন্তানের জন্ম দেন। ঘটনার পর্যায়ক্রমে রাম তার পুত্রদের নিকট পরাজিত হয় এবং বাল্মীকি মুনির বরের সাহায্যে রাম তার পুত্রদের পরিচয় জানতে পারেন। এরপর সীতা রামের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে পাতালে প্রবেশ করেন।


চব্বিশ হাজারেরও অধিক শ্লোকের সমন্বয়ে রচিত রামায়ণের উপরোক্ত কাহিনী সাতটি খণ্ডে বিভক্ত। রামায়ণ মহাকাব্য শুধু ভারতবর্ষেই প্রচলিত নয়, ভারতের বাইরেও এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালস, সুমাত্রা, জাভা বালিদ্বীপ, ইন্দোচীন, ইন্দোনেশিয়া, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, চীন, কোরিয়া, জাপান বিভিন্ন রাষ্ট্রে রামায়ণ অতিজনপ্রিয় এক মহাকাব্য হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। কীর্ত্তিবাস কর্তৃক বাংলায় অনূদিত বাল্মীকি রামায়ণ বাংলায় সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। রামায়ণের একমাত্র মহিলা কবি হিসেবে আমরা পাই চন্দ্রাবতীর নাম। বাংলাদেশের লোকনাট্যে রাম বিষয়ক উপস্থাপন একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পরিবেশন ধারা। ঢাকা, যশোর, খুলনা, বরিশাল, কুমিলহ্মা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রংপুর ও মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলাসমূহে রাম বিষয়ক উপস্থাপনা পরিবেশিত হয়ে থাকে। অঞ্চলভেদে এর উপস্থাপন রাম কীর্ত্তন, রামলীলা, রাম যাত্রা, রাম মঙ্গল, রামায়ণ গান ও কুশান গান নামে পরিচিত। বিভিন্ন গায়েন বিভিন্ন ধরনে রামায়ণ গান পরিবেশন করে থাকেন। কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার নয়াপাড়া গ্রামের রঘুনাথ সম্প্রদায় এদের মধ্যে অন্যতম। সেখানে মূল গায়েন বা দলপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গোপালচন্দ্র মোদক। রঘুনাথ সম্প্রদায় মোট নয়টি পালায় রামায়ণ গান পরিবেশন করে থাকেন। যথা: (১) দানবীর হরিশচন্দ্র (২) সীতার বিবাহ (৩) শক্তিশেল (৪) হনুমানের পাতাল বিজয় (৫) দশমুণ্ড রাবণ বধ (৬) শতমুণ্ড রাবণ বধ (৭) সীতার বনবাস (৮) পিতা-পুত্রের যুদ্ধ, (৯) পিতা-পুত্রের পরিচয়। গোপালচন্দ্র মোদক মূলত বর্ণনাত্মক রীতিতে রামায়ণ গান পরিবেশন করে থাকেন। ধর্মীয় আবেদনকে ছাড়িয়ে এটি যুগ-যুগান্তর ধরে মানবীয় মাহাত্ম্য হয়ে আমাদের বাঙালি সমাজে আজও জনপ্রিয়।
subscribe

Subscribe

Monitor continues to update the latest from This blog directly in your email!

oketrik

0 comments to রামায়ণ গান :

Post a Comment