Showing posts with label ঠুমরি. Show all posts
Showing posts with label ঠুমরি. Show all posts

ঠুমরি

0

Bookmark and Share
ঠুমরি চঞ্চল স্বভাবের লোকপ্রিয় গান। ঠুমরি ভাব প্রধান গীতি। ভাবের অকৃত্রিম প্রকাশ ঠুমরির ধর্ম। প্রাচীনকালে গান ও নাচের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল। সেকালের গান ‘ঠমক’ চালে লোকগীতি পরিবেশিত হতো। ‘ঠমক’ শব্দ থেকে ঠুমরির উৎপত্তি। এটা প্রচলিত ধারণা। ঠুমরি গান প্রেমের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। গানের বাণীতেই তার প্রকাশ। প্রেয়সী নারী তার প্রেমিক মনের মানুষকে প্রিয়তম, প্রাণেশ্বর, প্রেমিক, প্রাণনাথ, নাগর এ ধরনের অনুরাগের শব্দ ব্যবহার করে থাকে। গানের বাণীতে অভাব-অভিযোগ থাকে। রাগ-অনুরাগ থাকে। বিবাদ, চাঞ্চল্য, প্রগলভতা, অভিমান, অভিযোগ ইত্যাকার প্রেম বিষয়ক কথা ঠুমরি গানে স্বাভাবিক নিয়মেই এসে পড়ে। একটা বিষয় লক্ষণীয় ঠুমরি গানের ভাষায় পুরুষের প্রতি ‘নারী’র প্রেমাসক্তিই বড় হয়ে ধরা পড়ে। তাই ‘নারী’ সুলভ প্রকৃতির গান হিসেবেই ঠুমরি আখ্যায়িত।


ঠুমরি হিন্দি, উর্দু ও বজ ফুলি ভাষায় রচিত। ভাষা প্রাঞ্জল ও সাবলীল। তাই ঠুমরিতে একটা কাব্যময়তা বিরাজ করে, যা অনায়াসে শ্রোতার মনকে আকর্ষণ করতে পারে। প্রেমিক-প্রেমিকাকে তো অবশ্যই। ঠুমরি গান নাটকীয়তা থাকে। এই নাটকীয়তা ঠুমরি গানে বিশেষ মাত্রা সংযোজন করে। ফলে ঠুমরি উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ঠুমরি গানে মূলত দুটো স্তবক থাকে। ঠুমরির বিষয়বস্তু মুখ্যত প্রেম। ঠুমরি শৃঙ্গার রসের অভিব্যক্তিতে সিক্ত। ঠুমরি গায়িকাদের মধ্যে বেগম আখতার, রওশনারা বেগম, আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, রেবা মহুরী, সিদ্ধেশ্বরী বাঈ, কিশোর আমোনকর, গহরজান, হীরাবাঈ বরোদেকার, মাল্কা পোখরাজ, গিরিজা দেবী, অভিনেত্রী নার্গিসের মা জদ্দান বাঈ প্রমুখ সংগীত ভুবনে প্রসিদ্ধি অর্জন করেন। ঠুমরি আনন্দ ও বিরহের মেল বন্ধনের গান। যেমন, আনন্দ ঠুমরি, বাজুবন্দ খুল খুল জায়, জায়রে।


অব গাঁবরিয়া নে জার্দু সারা, জাদু কী পুড়িয়া ভর ভর মারে অবরা উড়ি উড়ি জায়, জায়রে।


[বঙ্গানুবাদ: ওগো, আমার হাতের তাগা খুলে খুলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এবার প্রিয়তম আমায় গুণ করেছে। জাদুর কাগজের টুকরো আমার দিকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছে। তাই কাপড়ের আঁচল আমার বার বার খসে পড়ছে।”]


বিরহ ঠুমরি মনকে উতলা-ব্যাকুল করে। মনকে আনমনা করে কোন্ সুদূরে নিয়ে যায়। যেমন কা কঁরা সজনী আয়ে না বালম।”


তড়পাত ধাত্রী মোরী উন বিন রাতিয়া ।।”


ঠুমরি গায়িকাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়িকা ছিলেন বেগম আখতার। তিনি আখতারী বাঈ নামে পরিচিত। পরে তিনি একজন নবাবকে বিয়ে করেন। বেগম আখতার, ঠুমরি খেয়ে ভূয়সী সুনাম অর্জন করেন। দেখতে সুন্দরী, পোশাকে-আশাকে শালীন, কানে বড় বড় পান্না-হীরে বসানো টব, গলায় সরু সোনার হার এবং তাতে একটা বড় হীরে বসানো, তার পাশে রকমারী পাথর। হাতেও দামি পান্না বসানো হীরের আংটি। মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলেই বোঝা যেত যে নবাবের বেগম সাহেবা। ‘কোয়েলিয়া তুমত করা পুকার’ গানটি রেকর্ড করার পরই তিনি সংগীত জগতে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান। তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ।


বেগম আখতার ঠুমরি গানে খুবই পারদর্শী ছিলেন। তেমনি দক্ষ ছিলেন গজল গানে। তাঁর গানের সুর শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখতে পারতো। বেগম আখতারের গান মানুষ কেমন ভালোবাসতো সে সম্পর্কে একটা চমকপ্রদ গল্প প্রচলিত আছে, লক্ষেœৗর এক গান-পাগল ভদ্রলোক বেগম আখতারের গান শুনে তাকে ভালোবেসে ফেলেন। কিন্তু বেগম আখতার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। উপায়ান্তর না দেখে সেই ভদ্রলোক বেগম আখতারের বাসার কাছে রাস্তায় খড়িমাটি দিয়ে নাম লিখে রাখতেন। বেগম আখতার যখন তাঁর নামের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে চলে যেতেন তাতেই তিনি তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান পেয়েছেন বলে মনে করতেন। ওই ভদ্রলোকের নাম বাহ্জাদ লখন ভী। এই কাহিনী থেকেই বেগম আখতারের গানের আবেদন কত সুদূর-প্রসারী তার প্রমাণ পাওয়া যায়। অসাধারণ সব ঠুমরি গেয়ে আখতার বাঈ গানের জগতে হয়েছেন রাজ্ঞী।
Read More >>