মাদারের গান বা মাদার গান বা মাদার বাঁশের জারি নাটোর জেলার নিজস্ব লোকসঙ্গীত হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশের অন্য কোনো অঞ্চলে এই গানের আসর বসলেও তা মূলত নাটোর জেলা থেকেই ধার করা। বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনাসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে মাদারের বাঁশ তোলা ও মাদার বাঁশের জারি প্রচলিত আছে। নাটোরের সর্বত্র মাদারগানের আসর ছিল একসময় নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। বর্তমানে পৌষসংক্রান্তিতে বা মাঘী পূর্ণিমায় মাদার বাঁশের জারি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মাদারের গান বা মাদার পীরের গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল একসময়। যদিও মাদার পীর নামক কোনো পীরের দরগা বা মাজার নেই কোথাও, তবু মাদার পীরের নামে মানত বা মানসিক করার চল আছে জেলার সর্বত্র। বিশেষ করে নাটোর জেলা সদর ও চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে। সন্তান কামনায়, রোগ-শোক থেকে নিরাময় কিংবা বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় লোকে মাদার পীরের নামে মানসিক করে। তারা পীরের দোহাই দিয়ে মানত করে যে বিপদ থেকে উদ্ধার পেলে মাদারেরর গানের আসর বসাবে।
একসময় এই অঞ্চলের গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, মাঠে-ময়দানে, উঠোনে-দাওয়ায় আসর বসতো মাদারগানের। পথে-প্রান্তরে প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হতো মাদার গানের সুর। পথ চলতে, লাঙল দিতে, জমি নিড়াতে, গরু চরাতে- সর্বত্রই মানুষের গলা চিরে বেরুত এই মাদার গানের ধূয়া। বিশেষ করে আসর বসতো মহররমের চাঁদ উঠলে, কলেরা-বসন্ত দেখা দিলে, জমিতে মড়ক দেখা দিলে।
মাদার পীর কোনো বাস্তব পীর নন। তার অস্তিত্ব কাল্পনিক, মারেফতি ধরনের। কিংবদন্তী আছে যে হারুত-মারুত নামের দুই ফেরেশতা একবার পৃথিবীতে আসেন জীবন পর্যবেক্ষণ করতে। তারা এসে এক সুন্দরী নারীর প্রেমে পতিত হন। তারা সেই নারীর প্রেমে এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন যে, ভুলেই যান তারা ফেরেশতা। তাদের প্রেমের ফলেই জন্ম হয় মাদার পীরের। তার জন্মের অব্যবহিত পরেই ফেরেশতারা খোদার ইচ্ছায় নিজেদের ভুলে যাওয়া সত্ত্বার কথা মনে করতে পারেন ফের। তারা এই দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যান আসমানে তাদের নিবাসে ও কর্মক্ষেত্রে। একদিন হযরত আলী (রাঃ) শিকারে এসে কাপকুপের জঙ্গলে কুড়িয়ে পান শিশুকে। পুত্রের মতো লালন-পালন করেন। পরবর্তীতে মারফতি তরিকায় কঠোর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন মাদার পীর। এবং এসমে আজমের মাধ্যমে দম বা শুমার ধরে অনেক অসাধ্য সাধনের শক্তি অর্জন করেন। অর্জিত এই শক্তি বা মাহাত্ম মানবকল্যাণে লাগানোর জন্য তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন দেশে-দেশান্তরে। তার এক-একটি কেরামতি নিয়ে এক-একটি পালা রচিত হয়েছে। এইরকম তার কয়েকটি পালার কথা জানা যায়। যেমন জিন্দাশাহ মাদার, আসকান মাদার, তালেমুল মাদার, খাতেমুল মাদার ইত্যাদি। এক এক পালায় এক এক নামে আবির্ভাব ঘটে শাহ মাদার পীরের। যেমন- ‘সমশের গোলাব’ পালায় রুহানী বা আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে মাদার পীর পাল্লা দেন বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ)-র সাথে। রাজা ছিলছত্র একবার শিশু ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন (রঃ)-কে চুরি করে নিয়ে যায় তার দেশে। রাজা ছিলছত্রের দেশ হচ্ছে আরব মুলুক থেকে অনেক দূরে- সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। হাসান-হোসেনকে মুক্ত করতে সেই দেশে যান মোহাম্মদ হানিফা। কিন্তু তিনিও বন্দী হন রাজা ছিলছত্রের সৈন্যদের হাতে। এই সংবাদে ক্রুদ্ধ হয়ে ছুটে যান মাদার পীর। তিনি বন্দী করেন রাজা ছিলছত্রকে। কিন্তু হাসান-হোসেনকে কোথায় বন্দী করে রেখেছে, তা কিছুতেই জানায় না রাজা ছিলছত্র। তখন মাদার পীর তার ঝোলার মধ্যে ভরে ছিলছত্রের গোটা রাজ্যটাই তুলে আনেন। তারপর মা ফাতেমা (রাঃ) এর সামনে এনে মেলে ধরেন ঝোলা এবং খুঁজে নিতে বলেন তাঁর পুত্রদের।
আর সব লোকগীতির মতো মাদার গানের আসর বসে খুব সাদাসিধেভাবে। সামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে পাটি-সপ-মাদুর বিছিয়ে বসে এই গানের আসর। কলা-কুশলীর সংখ্যাও বেশি নয়। প্রধান চরিত্র দুইজন। মাদার পীর এবং তার শিষ্য জুমল শাহ। এছাড়া আছে কয়েকজন দোহার-বাইন। দোহার-বাইনরা জটলা করে বসে আসরের মাঝখানে। তাদের হাতে থাকে খঞ্জনি। তাদের চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে গান গায় মাদার পীর ও জুমল শাহ। তাদের হাঁক-গানের সাথে ধূয়া ধরে দোহাররা। সওয়াল-জবাব-বিবৃতি সবকিছু করে মাদার জুমল দুইজনই। এদের পেছনে পেছনে গান-বাজনার তালে তালে নাচে নর্তকী। মাদার গানের নর্তকীর স্থানীয় নাম ছুকরি। ধুতি-শাড়ি-থান পরে পুরুষরাই ছুকরি সাজে এই গানে। দোহারদের বা জুমল শাহের জন্য অন্য কোনো সাজ-পোশাক নেই। শুধু মাদার পীরের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ পোশাকের। তার পরনে থাকে অজানুলম্বিত আলখাল্লা, গলায় তসবিহ, মাথায় থাকে শিরস্ত্রাণ, হাতে আশা (লাঠি)।
তবে সময়ের পরিবর্তনে মাদারের গান একটু ভিন্ন ভাবে পরিবেশনের রেওয়াজ শুরু হয়েছে।
মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে এক দিন ও এক রাত ধরে মাদার বাঁশের জারি অনুষ্ঠিত হলেও পৌষসংক্রান্তিতে এ অনুষ্ঠান চলে টানা সাত দিন ও সাত রাত ধরে। সাধারণত গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোলা উঠানে মাদার বাঁশের জারি পরিবেশন করা হয়।
মাদার বাঁশের জারিতে মাদার পীরের প্রতীক হিসেবে একটি বাঁশ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ লালসালুর একটুকরো কাপড় বা রুমাল ব্যবহার করেন, কেউ বা আবার লালসালু কাপড় দিয়ে মাথা ও বাহু বেঁধে নেন। পায়ে ঘুঙুর বেঁধে হারমোনিয়াম, ঢোল, কাঁসর বাজিয়ে গ্রামের মানুষ মাদার বাঁশের জারি পরিবেশন করে থাকেন।
মাদার বাঁশের জারি শুরু করার আগে বয়াতী ও মাদারী ফকিরের নেতৃত্বে গ্রামের সেরা বাঁশের ঝাড়ে ঢুকে গান গাইতে গাইতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক কোপে একটি বাঁশ (মাকড়া বাঁশ) কাটা হয়। তারপর সেই বাঁশটি নিয়ে যাওয়া হয় নদীর পাড়ে। নদীতে নামিয়ে বাঁশটিকে স্নান করানো হয় এবং তেল লাগিয়ে চুল ও কাপড় পরিয়ে দেওয়া হয়।
বাঁশটি নিয়ে টানা সাত দিনের জন্য শুরু হয় নাচ-গানের ভেতর দিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ। এই সাত দিন বয়াতী ও দোহারদের হাত থেকে মাদার বাঁশটিকে মাটি স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না। বয়াতী ও দোহারেরা মাদার বাঁশের জারি গাওয়ার সময় মাদার বাঁশটি উঁচুতে তুলে ধরে রাখেন। যখন তাঁরা বিশ্রামে যান, তখন বাঁশটিকে মাচার ওপর তুলে রাখেন।
মাদার বাঁশের জারির জন্য একটি বাড়িতে ঢোকার আগে বয়াতী ‘গাজী মাদার-শাহ মাদার’ বলে ধ্বনি তোলেন। আর দোহারেরা সঙ্গে ‘দম-দম’ বলে ধ্বনি তোলেন। তাঁরা বাড়িতে ঢুকতেই বাড়িওয়ালা পানির ছিটা দিয়ে মাদার বাঁশের জারির জন্য উঠান পবিত্র করে দেন। পবিত্র উঠানে বয়াতী শুরু করেন মাদার পীরের জারি কাহিনির গান। নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনাসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে মাদারের বাঁশ তোলা ও মাদার বাঁশের জারি প্রচলিত আছে।
Read More >>
একসময় এই অঞ্চলের গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, মাঠে-ময়দানে, উঠোনে-দাওয়ায় আসর বসতো মাদারগানের। পথে-প্রান্তরে প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হতো মাদার গানের সুর। পথ চলতে, লাঙল দিতে, জমি নিড়াতে, গরু চরাতে- সর্বত্রই মানুষের গলা চিরে বেরুত এই মাদার গানের ধূয়া। বিশেষ করে আসর বসতো মহররমের চাঁদ উঠলে, কলেরা-বসন্ত দেখা দিলে, জমিতে মড়ক দেখা দিলে।
মাদার পীর কোনো বাস্তব পীর নন। তার অস্তিত্ব কাল্পনিক, মারেফতি ধরনের। কিংবদন্তী আছে যে হারুত-মারুত নামের দুই ফেরেশতা একবার পৃথিবীতে আসেন জীবন পর্যবেক্ষণ করতে। তারা এসে এক সুন্দরী নারীর প্রেমে পতিত হন। তারা সেই নারীর প্রেমে এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন যে, ভুলেই যান তারা ফেরেশতা। তাদের প্রেমের ফলেই জন্ম হয় মাদার পীরের। তার জন্মের অব্যবহিত পরেই ফেরেশতারা খোদার ইচ্ছায় নিজেদের ভুলে যাওয়া সত্ত্বার কথা মনে করতে পারেন ফের। তারা এই দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যান আসমানে তাদের নিবাসে ও কর্মক্ষেত্রে। একদিন হযরত আলী (রাঃ) শিকারে এসে কাপকুপের জঙ্গলে কুড়িয়ে পান শিশুকে। পুত্রের মতো লালন-পালন করেন। পরবর্তীতে মারফতি তরিকায় কঠোর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন মাদার পীর। এবং এসমে আজমের মাধ্যমে দম বা শুমার ধরে অনেক অসাধ্য সাধনের শক্তি অর্জন করেন। অর্জিত এই শক্তি বা মাহাত্ম মানবকল্যাণে লাগানোর জন্য তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন দেশে-দেশান্তরে। তার এক-একটি কেরামতি নিয়ে এক-একটি পালা রচিত হয়েছে। এইরকম তার কয়েকটি পালার কথা জানা যায়। যেমন জিন্দাশাহ মাদার, আসকান মাদার, তালেমুল মাদার, খাতেমুল মাদার ইত্যাদি। এক এক পালায় এক এক নামে আবির্ভাব ঘটে শাহ মাদার পীরের। যেমন- ‘সমশের গোলাব’ পালায় রুহানী বা আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে মাদার পীর পাল্লা দেন বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ)-র সাথে। রাজা ছিলছত্র একবার শিশু ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন (রঃ)-কে চুরি করে নিয়ে যায় তার দেশে। রাজা ছিলছত্রের দেশ হচ্ছে আরব মুলুক থেকে অনেক দূরে- সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। হাসান-হোসেনকে মুক্ত করতে সেই দেশে যান মোহাম্মদ হানিফা। কিন্তু তিনিও বন্দী হন রাজা ছিলছত্রের সৈন্যদের হাতে। এই সংবাদে ক্রুদ্ধ হয়ে ছুটে যান মাদার পীর। তিনি বন্দী করেন রাজা ছিলছত্রকে। কিন্তু হাসান-হোসেনকে কোথায় বন্দী করে রেখেছে, তা কিছুতেই জানায় না রাজা ছিলছত্র। তখন মাদার পীর তার ঝোলার মধ্যে ভরে ছিলছত্রের গোটা রাজ্যটাই তুলে আনেন। তারপর মা ফাতেমা (রাঃ) এর সামনে এনে মেলে ধরেন ঝোলা এবং খুঁজে নিতে বলেন তাঁর পুত্রদের।
আর সব লোকগীতির মতো মাদার গানের আসর বসে খুব সাদাসিধেভাবে। সামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে পাটি-সপ-মাদুর বিছিয়ে বসে এই গানের আসর। কলা-কুশলীর সংখ্যাও বেশি নয়। প্রধান চরিত্র দুইজন। মাদার পীর এবং তার শিষ্য জুমল শাহ। এছাড়া আছে কয়েকজন দোহার-বাইন। দোহার-বাইনরা জটলা করে বসে আসরের মাঝখানে। তাদের হাতে থাকে খঞ্জনি। তাদের চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে গান গায় মাদার পীর ও জুমল শাহ। তাদের হাঁক-গানের সাথে ধূয়া ধরে দোহাররা। সওয়াল-জবাব-বিবৃতি সবকিছু করে মাদার জুমল দুইজনই। এদের পেছনে পেছনে গান-বাজনার তালে তালে নাচে নর্তকী। মাদার গানের নর্তকীর স্থানীয় নাম ছুকরি। ধুতি-শাড়ি-থান পরে পুরুষরাই ছুকরি সাজে এই গানে। দোহারদের বা জুমল শাহের জন্য অন্য কোনো সাজ-পোশাক নেই। শুধু মাদার পীরের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ পোশাকের। তার পরনে থাকে অজানুলম্বিত আলখাল্লা, গলায় তসবিহ, মাথায় থাকে শিরস্ত্রাণ, হাতে আশা (লাঠি)।
তবে সময়ের পরিবর্তনে মাদারের গান একটু ভিন্ন ভাবে পরিবেশনের রেওয়াজ শুরু হয়েছে।
মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে এক দিন ও এক রাত ধরে মাদার বাঁশের জারি অনুষ্ঠিত হলেও পৌষসংক্রান্তিতে এ অনুষ্ঠান চলে টানা সাত দিন ও সাত রাত ধরে। সাধারণত গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোলা উঠানে মাদার বাঁশের জারি পরিবেশন করা হয়।
মাদার বাঁশের জারিতে মাদার পীরের প্রতীক হিসেবে একটি বাঁশ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ লালসালুর একটুকরো কাপড় বা রুমাল ব্যবহার করেন, কেউ বা আবার লালসালু কাপড় দিয়ে মাথা ও বাহু বেঁধে নেন। পায়ে ঘুঙুর বেঁধে হারমোনিয়াম, ঢোল, কাঁসর বাজিয়ে গ্রামের মানুষ মাদার বাঁশের জারি পরিবেশন করে থাকেন।
মাদার বাঁশের জারি শুরু করার আগে বয়াতী ও মাদারী ফকিরের নেতৃত্বে গ্রামের সেরা বাঁশের ঝাড়ে ঢুকে গান গাইতে গাইতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক কোপে একটি বাঁশ (মাকড়া বাঁশ) কাটা হয়। তারপর সেই বাঁশটি নিয়ে যাওয়া হয় নদীর পাড়ে। নদীতে নামিয়ে বাঁশটিকে স্নান করানো হয় এবং তেল লাগিয়ে চুল ও কাপড় পরিয়ে দেওয়া হয়।
বাঁশটি নিয়ে টানা সাত দিনের জন্য শুরু হয় নাচ-গানের ভেতর দিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ। এই সাত দিন বয়াতী ও দোহারদের হাত থেকে মাদার বাঁশটিকে মাটি স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না। বয়াতী ও দোহারেরা মাদার বাঁশের জারি গাওয়ার সময় মাদার বাঁশটি উঁচুতে তুলে ধরে রাখেন। যখন তাঁরা বিশ্রামে যান, তখন বাঁশটিকে মাচার ওপর তুলে রাখেন।
মাদার বাঁশের জারির জন্য একটি বাড়িতে ঢোকার আগে বয়াতী ‘গাজী মাদার-শাহ মাদার’ বলে ধ্বনি তোলেন। আর দোহারেরা সঙ্গে ‘দম-দম’ বলে ধ্বনি তোলেন। তাঁরা বাড়িতে ঢুকতেই বাড়িওয়ালা পানির ছিটা দিয়ে মাদার বাঁশের জারির জন্য উঠান পবিত্র করে দেন। পবিত্র উঠানে বয়াতী শুরু করেন মাদার পীরের জারি কাহিনির গান। নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনাসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে মাদারের বাঁশ তোলা ও মাদার বাঁশের জারি প্রচলিত আছে।