ভাওয়াইয়া বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বহু বছর ধরে প্রচলিত জনপ্রিয় গান। মূলত রংপুর এলাকার প্রত্যন্ত জনপদে এ গানের সৃষ্টি ও চর্চা রয়েছে। এসব গানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে_স্থানীয় সংস্কৃতি, জনপদের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক ঘটনাবলি ইত্যাদির সার্থক প্রয়োগ ঘটেছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে নদীনালা কম থাকায় গরুর গাড়িতে চলাচলের প্রচলন ছিল। আর গরুর গাড়ির গাড়োয়ান রাতে গাড়ি চলা অবস্থায় বিরহ ভাবাবেগে কাতর হয়ে আপন মনে গান ধরত। উঁচু-নিচু রাস্তায় গাড়ির চাকা পড়লে তার গানের সুরে আধো ভাঙা বা ভাঁজ পড়ে। এ রকম সুরে ভাঙা বা ভাঁজ পড়া গান গাওয়ার ধরন ভাওয়াইয়া গানে লক্ষ করা যায়। ভাওয়াইয়া গানে সুরের ভাঁজ উঁচু স্বর থেকে ক্রমে নিচের দিকে নেমে আসে। সুরে ভাঁজ পড়া ভাওয়াইয়া গানের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। দোতারা-সহযোগে দীর্ঘ লয়ে এসব গান গাওয়া হয়। প্রেম বা ভাবই ভাওয়াইয়া গানের মূল উপজীব্য। ভাওয়াইয়া মূলত ভাবপ্রধান গান। ভাব শব্দ থেকে ভাওয়াইয়া গানের উৎপত্তি। আবার 'ভাওয়া' শব্দ থেকে ভাওয়াইয়া এসেছে_এমনও মনে করা হয়। কাশ বা নলখাগড়ার বিস্তীর্ণ চরকে 'ভাওয়া' বলা হয়। ভাওয়াইয়া ধু ধু প্রান্তরের গান। সাধারণত গরুর গাড়ি এবড়োখেবড়ো মাটিতে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় মৈশাল এ গান গেয়ে থাকে। মৈশাল, গাড়োয়ান, মাহুত প্রমুখ এই ভাওয়াইয়া গানের নায়ক। ভাওয়াইয়া ভারতের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং বাংলাদেশের রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রচলিত।
0 comments to ভাওয়াইয়া :
Post a Comment