বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে গাজীর গান বেশ জনপ্রিয়। আউল-বাউল সাধকরা হিন্দু সমাজে যেমন দেহতত্ত্ব ও ভক্তিমূলক বাউল গান গেয়ে বেড়ান, ঠিক তেমনই মুসলমান সমাজে সাঁই, দরবেশ, গাজী-ফকিররাও ভক্তিমূলক তত্ত্বকথার মাধ্যমে জীবনবোধের গৌরবগাথা গানের মধ্য দিয়ে প্রচার করেন। এদের দর্শন হলো, মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা লুকিয়ে থাকেন। তার সাক্ষাৎ লাভের আশায় তারা খ্যাপার মতো গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেড়ান। এখানে হিন্দু-মুসলমান-জৈন-খ্রিস্টানদের কোনো গণ্ডি নেই। আছে মানবধর্ম এবং মানবতা। মুসলমান হয়েও মুসলমানদের সব নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠানের ওধর্ে্ব থাকেন গাজী। এরা মৈত্রী, সম্প্রীতির কথা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন। চিকিৎসাও করেন গরিব লোকের। অসুস্থ রোগীর গায়ে চামরের স্পর্শ ও ঝাড়ফুঁক দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। জলপড়া, তেলপড়াও দেন। বিনিময়ে টাকা কিংবা চাল নেন। গ্রামের সর্বত্র গাজীর দল ঘুরে ঘুরে তত্ত্বকথা প্রচার করেন। এদের মাথায় থাকে কাপড়ের টুপি, গলায় তসবি মালা আর হাতে চামর। কারও গলায় আবার দেখা যায় কোঁচ বা ফটিকের মালা। পরনে থাকে কালো ঢিলে আলখাল্লা। এরা সাধারণ মানুষের একেবারেই কাছাকাছি থাকেন এবং যে কোনো বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এজন্য সাধারণের কাছে গাজীরা পরম শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকেন। এরা গৃহস্থবাড়িতে ঢুকেই ছড়া বলতে শুরু করেন। এরপর গাজীর দল অনেক সময় একা বা দু'জন মিলে গান শুরু করেন। গাজীর গানে অসাম্প্রদায়িকতার ছাপ সুস্পষ্ট। যেমন, 'মুসলমান বলে গো আল্লা হিন্দু বলে হরি/ নিদানকালে যাবে রে ভাই একি পথে চলি/ দোয়ানি করিবা আল্লারে'...
0 comments to গাজীর গান :
Post a Comment